ভ্রমি বিশ্ব বিস্ময়ে
ভূ-পর্যটক আশরাফুজ্জামান উজ্জ্বল
ভ্রমণ শব্দটির উৎপত্তি সংস্কৃত ‘ভ্রম’ শব্দটি থেকে। ভ্রমণ শব্দটির আভিধানিক অর্থ হল চলন, অনব¯’ান। পর্যটন শব্দটি দিয়ে বোঝায় ব্যাপক ভ্রমণ। পথে বেরিয়ে পড়ার একটা আনন্দ আছে। পুণ্যের টান তার সঙ্গে যুক্ত হলে সে টান হয় আরও জোরালো। পুণ্যলোভাতুর মানুষ কোনকালে কম ছিল না। ভ্রমণ বলতে একসময় মসজিদ, মন্দির, মাজার ইত্যাদি দেখে বেড়ানো বোঝাত। তীর্থ দর্শন আর ভ্রমণে কোন পার্থক্য ছিল না। পশ্চিমে বেড়াতে যাওয়াকে ‘ভ্রমণ’ নাম দেওয়া হয়েছে। ১৯ শতকের মাঝামাঝি সময়ে রেলগাড়ি চালু হওয়ার পরে। ১৯ শতকের আগে সাধারণত পায়ে হেঁটে ঘোরা, দেশের নানা ¯’ানে ঘুরে বেড়ানো বিশেষ করে বিচারের কাজে এবং সমুদ্র যাত্রাকেই ভ্রমণ বলা হত। কিš’ আদতে ভ্রমণের ধারণা থেকে এটি সম্পূর্ণ আলাদা একটি বিষয় ছিল। মানুষ বহু প্রাচীনকাল থেকে ঘুরে বেড়া”েছ। এই ঘুরে বেড়ানোর বেশিরভাগটাই কিš’ কোন কিছু না ভেবেচিন্তে উদ্দেশ্যবিহীনভাবে। ভবঘুরে মানুষ একা একাও ঘুরে বেড়াত। কিš’ সময় যত গড়িয়েছে বদলে গেছে এই ঘুরে বেড়ানোর ধরন। সময়ের সঙ্গে মানুষের সভ্যতারও বহুমুখী বিকাশ ঘটেছে। উদ্দেশ্যহীন ঘুরে বেড়ানোর জায়গায় এসেছে সচেতন ভ্রমণ। অজানা-অচেনাকে জানা-চেনার খোঁজে ভ্রমণ।
একা ঘুরে বেড়ানোর বদলে চলছে দলগত ভ্রমণ। ব্যাবিলনীয় ও মিশরীয় সম্রাটদের আমলে অবসর সময় কাটানোর জন্য ভ্রমণ করার প্রথম ঘটনাটি ঘটেছিল। প্রাচীন ব্যাবিলনীয়ার শাসক ছিলেন শুলগি (খ্রিস্ট জšে§র ২০০০ বছর আগে)। শুলগি ভ্রমণকারীদের জন্য রাস্তার দেখভাল করতেন। রাস্তার পাশে বিশ্রামের ঘরও বানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। অতীতে সাধারণত দু’ধরনের ঘটনায় মানুষ ঘর ছেড়ে বাইরে বেরোত। ব্যবসা-বাণিজ্য ও তীর্থ¯’ানে ধর্মকর্ম করতে। রোমান সম্রাটদের আমলেই আন্তর্জাতিক ভ্রমণ প্রথম গুর”ত্ব পায়। রোমান সম্রাটদের কড়া শাসনে কোন জলদস্যুদের ভয় না থাকায় সমুদ্র ভ্রমণ খুব নিরাপদ ছিল। ইংল্যান্ড থেকে সিরিয়ার মধ্যে কোনরকম আন্তর্জাতিক সীমানা ছিল না। ফলে দেশ-বিদেশ ভ্রমণ সহজ ছিল। সর্বত্র ছিল রোমান টাকা-পয়সার চল। ভাষা ছিল ল্যাটিন। সিসিলি, গ্রিস, রোডস, ট্রয় এবং মিশরে রোমানরা বেড়াতে যেত। হলিডে (ঐড়ষরফধু ছুটির দিন) কথাটি এসেছে ‘হোলি ডে’ (ঐড়ষরফধু পবিত্র দিন) থেকে। অতীতে পবিত্র দিনে অবসর সময়ে নানা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান করা হত। বর্তমানে আমরা অবশ্য হলিডে বলতে র€টিনমাফিক কাজকর্মের একঘেঁয়ে জীবন থেকে ছুটি-ই বুঝি।
প্রাচীন রোমে নাগরিক ছুটির দিন (চঁনষরপ ঐড়ষরফধু) পালন করা হত। অতীতের যেখানে-সেখানে ঘোরাঘুরিই মানব সমাজের বিবর্তনের সঙ্গে পালটে গিয়ে আজকের দিনের ভ্রমণে এসে দাঁড়িয়েছে যা দ্র€ত বিকাশশীল, অপেক্ষাকৃত কম দূষণকারী এক বৃহত্তম শিল্প। যাযাবর পশুর পাল তাড়া করে, নতুন তৃণভূমির খোঁজে গিরিরতœ, প্রণালী, মর”কান্তর, হেলায় ডিঙিয়ে চলে গেছে মহাদেশ থেকে মহাদেশে। সংস্কৃতির অভিবাসন এভাবেই গড়ে ওঠেছে। সুলেমান আল মাহিরি মধ্যযুগের আরব পণ্ডিত। তিনি জানিয়েছেন, প্রাচীন আরব নাবিকরা চিনত প্রশান্ত মহাসাগর, বেরিং প্রণালী হয়ে আর্কটিক সমুদ্রপথ। আরবীয় পর্যটক আল মাসুদির মতে, আরবরা বেরিং প্রণালীকে বলত ‘ওয়ারাং সমুদ্র’। দক্ষিণ আফ্রিকার নৃতাত্ত্বিক ড. এম ডি. ডব ু জেফায়ারস ১৯৫১তে রিয়ো গ্রানডি নদীতে খুঁজে পান নিগ্রো-হেমাটিক নরকরোটি। তাঁর সিদ্ধান্ত, কলম্বাসের ৫০০ বছর আগে ১০০০ খ্রিস্টাব্দে আরবরা পৌঁছায় আমেরিকায় ও সংলগ্ন ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে। কলম্বাস সুহৃদ পিটার নীরটির বৃত্তান্ত অনুযায়ী, আমেরিকা ভূখণ্ড ক্যারিবীয় দ্বীপে কলা, ভুট্টা নিয়ে এসেছে আরবরাই। ‘পথ আমারই সাথী, আমি পথের লাগি বৈরাগী।’ অভিযানে আগ্রহ মানুষের চিরকালীন। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সারা পৃথিবীতে দেখা যা”েছ এক ধরনের ট্যুরিস্ট মানসিকতা, এমনকি হিমালয়ে অভিযাত্রীরাও তার ব্যতিক্রম নয়। ১৯৬০ সালে হিমালয়ের ‘নন্দাঘুণ্টি’ শিখর অভিযান করে বাঙালির উদ্যোগে সারা ভারতে সেটাই প্রথম শৃঙ্গাভিযান। তার আগে বিক্ষিপ্তভাবে নানাজন হিমালয়ে পৌঁছেছেন তার দুর্দমনীয় আকর্ষণে। তীর্থযাত্রীরা গিয়েছেন পুণ্যের টানে। পৃথিবীতে ঠিক কবে কোথায় প্রথম স্পোর্ট হিসেবে পর্বতাভিযানের সূত্রপাত হয়েছিল তা নিয়ে নানান মত প্রচলিত আছে। অনেকে বলেন, আজ থেকে প্রায় ২৫০ বছর আগে হোরেস বেনেডিক্ট ডি সাসুরি নামে জনৈক জেনেভাবাসী ইউরোপের উ”চতম পর্বতশিখর মঁ ব াঁ শিখরে (১৫,৭৮১ ফুট) উঠেছিলেন এবং সেটাই বিশ্বের প্রথম পর্বতারোহণের ঘটনা। অন্য আর একটি দলের অভিমত হ”েছ ইংল্যান্ডের এডওয়ার্ড হুইমপার হলেন (১৮৪০-১৯১১) প্রকৃতপক্ষে পর্বতারোহণের জনক। পশ্চিমবঙ্গের মেয়েরাও পিছিয়ে নেই পর্বতারোহণে। ১৯৬৭ সালে দীপালী সিনহার নেতৃত্বে পরিচালিত এই অভিযানটি সে সময় সাধারণ মানুষের মনে প্রবল চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছিল। তাদের প্রথম অভিযান ছিল গাড়োয়ালের রোন্টি (১৯,৮৯৩ ফুট) পর্বত শিখর। পরবর্তীতে আরো অনেকে সুজয়া গুহর নেতৃত্বে ললনা (২০,১৩০ ফুট), রমা সেনগুপ্তর নেতৃত্বে কেদারনাথ ডোস (২২,৪১০ ফুট) এবং স্বপ্ন চৌধুরীর নেতৃত্বে মৃগথুনি (২২,৪৯০ ফুট) দিপালীর সিনহার নেতৃত্বে বড়াশীগৃরি (২১,৮৬৮ ফুট)। বুদ্ধদেব গুহ একজন উপন্যাসিক ও গল্পকার। তিনি নিজে প্রচুর অরণ্য ভ্রমণ করেছেন। অস্ট্রেলিয়া ছাড়া পৃথিবীর সবকটি মহাদেশের অরণ্যেও তার পায়ের ছাপ পড়েছে। সুন্দরবন নিয়ে তিনি বলেছেন,
‘সুন্দরবনের মতো আশ্চর্য নৈসর্গিক সৌন্দর্য, তার গা-ছমছম আধিভৌতিক পরিবেশ, তার অভাবনীয় নির্জনতা, পর্যটককে কৌতূহল আর তার ভয়ের গাটছড়াতে বেঁধে এমনই এক অন্যলোকে নিয়ে যেতে পারে এবং যায় ; যা অন্য খুব কম অরণ্যই পারে। নামে সুন্দর হলে কি হবে এমন ভয়াবহ বন পৃথিবীতে এক বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোথাও আছে বলে আমার জানা নেই। এই ভয়াবহতা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য যতটা মানুষখেকো বাঘ এবং কুমির হাঙ্গরের জন্যও ততটাই।’ আমরা যদি আমাদের জনসংখ্যা না কমাতে পারি, যদি দারিদ্র্যমোচন না করতে পারি, যদি শিক্ষার বিস্তার না করতে পারি, শুধুমাত্র স্বাক্ষরতা নয়, প্রকৃত শিক্ষার কথা বলছি, তাহলে ভ্রমণ এবং পর্যটনের জন্য কোন অরণ্যই আর থাকবে না এই দেশে। যদি রাজনীতিক নেতাদের হাত থেকে আÍরক্ষা করতে না পারি তাহলে ওসমান গণি’র মতো সর্বভূক আর লোভী মানুষ নামক জানোয়ারের কবলিত হয়ে সব অরণ্য, সব সৌন্দর্য এবং সব বন্যপ্রাণীই হয়ত নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে আর ২৫ বছরের মধ্যেই। ১৮৪১ সালে যুক্তরাজ্যের লিস্টার শহর থেকে টমাস কুকের উদ্যোগে ৫৭০ জন পর্যটক নিয়ে ট্রেনে বেড়াতে বের€লেন যখন তখনই জš§ নিলো একটি নতুন শিল্প। যার নাম পর্যটন শিল্প। এই শিল্পটি আন্তর্জাতিক চেহারা পেল যখন কুক সাহেব ইউরোপ ভূখণ্ডে পর্যটনের আয়োজন করলেন ১৮৫৬ সালে। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, অমিয় চক্রবর্তী, সৈয়দ মুজতবা আলী এই তিনজনের সঙ্গেই রামনাথ বিশ্বাসের অনেক পার্থক্য। সুনীতিকুমার পণ্ডিত, অমিয় চক্রবর্তী বিদগ্ধ কবি, অধ্যাপক সৈয়দ মুজতবা আলী সাহিত্যিক ও পড়াশোনা করা লোক, প্রত্যেকেই কখনো না কখনো শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আর তিনজনেরই ছিল রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সংযোগ। সুনীতিকুমার বেড়াতে বেরিয়েছিলেন ভারত ইতিহাসের পথ অনুসন্ধান করতে, অমিয় চক্রবর্তী পৃথিবী ঘুরেছেন রবীন্দ্রনাথের সঙ্গী হয়ে বা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে বা সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি হয়ে আর সৈয়দ মুজতবা আলী গিয়েছিলেন শিক্ষকতার টানে, চাকুরিসূত্রে বা উ”চশিক্ষার জন্য। রামনাথ বিশ্বাস বেড়িয়েছেন সাইকেলে করে স্বাধীনভাবে।
‘পৃথিবীর পথে’ বইটিতে তাঁর এই ঘুরে বেড়ানোর নানান রকম অভিজ্ঞতা ঝুলি উজাড় করে দেওয়া। পর্যটকদের বা ট্যুর ‘ঃবহধৎু’-র বাইরে তারা যেতে যায় না। নিশ্চিন্ত নিরপেক্ষতা খোঁজে। আর তাই পৃথিবীতে পর্যটক, পরিব্রাজকের সংখ্যা কমে যা”েছ। পর্যটনে সরকারি রাজস্ব যত বাড়বে বিমল মুখার্জি, কলে াল গুহ, রামনাথ বিশ্বাসের মতো পর্যটক ততো অদৃশ্য হবেন। বাড়বে সৌখিন ট্যুরিস্ট। তাদের কেউ সৈয়দ মুজতবী আলী হতে পারবেন না। দর্শনার্থী (ঞড়ঁৎরংঃ) ; পর্যটক (ঞৎধাবষবৎ), পরিব্রাজক (এষড়নবঃৎড়ঃঃবৎ) তিনটি তিন রূপ। আজকাল প্যাকেজ ট্যুরের মাধ্যমে যারা ঘুরে বেড়ান তারা হ”েছন ঞড়ঁৎরংঃ এবং ভ্রমণসূচিতে ভাঙচুর ঘটিয়ে ভ্রমণকারী হয়ে ওঠে পর্যটক (ঞৎধাবষবৎ) আবার পর্যটককে ছাড়িয়ে অন্য উ”চতায় পৌঁছে যান পরিব্রাজক (এষড়নবঃৎড়ঃঃবৎ)। পরিব্রাজক আলাদা গোত্রের মানুষ। নির্দিষ্ট ঠিকানায় তার জš§ হলেও জীবনের এক বিশেষ পর্ব থেকে তিনি স্বে”ছায় ঠিকানা বদল করেন। তারপর সারাজীবন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ঘুরে বেড়ান। ¯’ায়ী ঠিকানাকে পুরানো পোশাকের মতো ছেড়ে রেখে বিভিন্ন ঠিকানায় তিনি বসবাস করেন।
সব ঠিকানা সাময়িক। প্রাচীন ইতিহাসে অতীশ দীপংকর এবং আধুনিককালে রাহুল সাংকৃত্যায়ন ছিলেন যথার্থ পরিব্রাজক। ২০০১ সালের সেপ্টেম্বরে টুইন টাওয়ারের ঘটনার পর থেকে পৃথিবী ভ্রমণ অনেক কঠিন এবং ব্যয়বহুল হয়ে পড়েছে। পর্যটনকে শিল্পে রূপান্তরিত করার পরে এখন সব ভ্রমণকারীই ঃড়ঁৎরংঃ, বাঁধা পথের পর্যটক। মজার বিষয় হল, অনেক বিখ্যাত ভূ-পর্যটকের লেখা জীবিত অব¯’ায় বিখ্যাত হয়নি, মার্কোপোলো তেমনই একজন। মার্কোপোলোর পাণ্ডুলিপি থেকে যেদিন আবিষ্কৃত হলো এশিয়া মহাদেশের বিশেষ করে চীনের সত্য ইতিহাস, পণ্ডিতরা বুঝাতে পারলেন এই পাণ্ডুলিপির এক বর্ণও মিথ্যা নয়। এশিয়ার সম্পর্কে জানবার জন্য এই পাণ্ডুলিপি জ্ঞানের খনি, সেদিন থেকেই একটু একটু করে বাড়তে লাগল শ্রদ্ধা এবং সম্মান। অজস্র কপি বিক্রি হয়েছিল বইটির সেই পাণ্ডুলিপির নাম ‘দি বুক অব মার্কোপোলো’। প্রাচীন সংস্কৃতসাহিত্যে ভ্রমণসুখ পাওয়া যায় কালিদাসের মেঘদূত কাব্যে। বিরহের কাব্য রচনা করতে বসেও কালিদাস মেঘদূতের পূর্বমেঘের পাঠকদের ভ্রমণসুখ দিয়েছেন। মধ্যযুগে মৈথিল কবি বিদ্যাপতি লিখেছিলেন ‘ভূপরিক্রমা’। অষ্টাদশ শতকে বাংলায় একটি ভ্রমণমূলক বই লেখা হয়। বইটির নাম তীর্থমঙ্গল, লিখেছিলেন বিজয়রাম সেন। ভ্রমণকাহিনী ও ভ্রমণসাহিত্য এক নয়। সব ভ্রমণ কাহিনীই ভ্রমণসাহিত্য হয়ে উঠতে পারে না। ভ্রমণকাহিনী ব্যক্তির ভ্রমণের কাহিনী হতে পারে, কিš’ সাহিত্য হয়ে ওঠে ব্যক্তিগত গণ্ডি ছাড়িয়ে সকলের কাছে আবেদনগ্রাহ্য হয়ে ওঠার মধ্য দিয়ে। সৈয়দ মুজতবা আলীর দেশে-বিদেশে তার একটি প্রকৃত উদাহরণ। ভ্রমণকারীর কাছে ভ্রমণের স্মৃতি যত তাড়াতাড়ি আবদ্ধ হয়ে যায়, পর্যটক, পরিব্রাজকের কাছে তা হয় না। ভ্রমণের ৫০ বছর পার তাই ‘দুচাকার দুনিয়া’ লিখতে পারেন বিমল মুখার্জি, ভ্রমণের ২৫ বছর পরে।
লিখলেন কলে াহ গুহ ‘পায়ে পায়ে পৃথিবী’। বাংলা ভাষায় ভ্রমণ সংক্রান্ত বইয়ের সংখ্যা কয়েক হাজার। শুধুমাত্র বাংলাদেশী ভ্রমণ লেখকদের চার শতাধিক ভ্রমণ বিষয়ক বই রয়েছে এবং সবচেয়ে বেশি ভ্রমণ বিষয়ক বই লিখেছেন মীনা আজিজ এবং তারপর রাবেয়া খাতুন। ভারতীয় পর্যটকদের লেখা প্রথম ইংরেজিতে লেখা ভ্রমণ কাহিনী হল কেশবচন্দ্র সেনের ১৮৭০ খ্রি. কলকাতা থেকে লন্ডন ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা ‘কেশবচন্দ্র সেন ইন ইংল্যান্ড : ডায়েরিজ, সারমনস, এ্যাড্রোসেস এন্ড ইপিসল্স। এবং বর্তমানে ভারতীয় লেখকদের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা ‘কেশবচন্দ্র সেন ইন ইংল্যান্ড : ডায়েরিজ, সারমনস, এ্যাড্রেসেস এন্ড ইপিসল্স’ এবং বর্তমানে ভারতীয় লেখকদের মধ্যে যারা ইংরেজিতে ভ্রমণ কাহিনী লিখে বিখ্যাত হয়েছেন তাদের মধ্যে উলে খযোগ্য হ”েছন বিক্রম নায়ার, সালমান র€শদী। সবচেয়ে সচেতন বাংলা ভ্রমণ কাহিনিটি সম্ভবত বিজয়রায় সেনের ‘তীর্থমঙ্গল’। সেটি নগেন্দ্রনাথ বাবু ১৯১৫ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে প্রকাশ করেন। বাংলা ভাষায় প্রথম সার্থক ভ্রমণ কাহিনীর উদাহরণ সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পালামৌ’। এহতেশাম উদ্দীন মীর্জা—প্রথমে বাংলার নবাব মীরজাফরের অধীনে চাকরি করতেন। তিনি সর্বপ্রথম ইউরোপ ভ্রমণকারী বাঙালি। ১৭৬৭ সাল দেশে ফেরেন এবং ফারসিতে তার ভ্রমণ কাহিনী লেখেন এবং জেমস এডওয়ার্ড আলেকজান্ডার এই গ্রš’টির ইংরেজি অনুবাদ করেন লন্ডন থেকে ১৮২৭ সালে। মহাকাশ ভ্রমণ এখন আর কোনো লেখকের কল্প-কাহিনী নয়। ই”েছ এবং টাকার সমন্বয় হলে এটি এখন বাস্তবায়ন সম্ভব। তবে মহাকাশ ভ্রমণের জন্য প্র¯’তিমূলক ট্রেনিংয়ের প্রয়োজন রয়েছে। আনুশেহ মহাকাশে যাবার আগে রাশিয়ায় ৬ মাস ট্রেনিং কোর্স করেছেন। পৃথিবী থেকে ওঝঝ যেতে আনুশাহ’র দুইদিন লেগেছিল এবং সেখানে তিনি ৮ দিন অব¯’ান করেন। ঞযব ওহঃ’ষ ংঢ়ধপব ংঃধঃরড়হ (ওঝঝ) রং ধ পড়ষষধনড়ৎধঃড়রহ ড়ভ ১৬ পড়ঁহঃৎরবং যিড় যধাব পড়সব ঃড়মবঃযবৎ পড়ড়ঢ়বৎধঃরাবষু ধহফ ঢ়বধপবভঁষষু ঃড় ড়িৎশ রহ ংঢ়ধপব. ঞযব ওঝঝ ধিুং ধনড়ঁঃ ৪৫৪,২৪০ ঢ়ড়ঁহফং ১৭,৫০০ সরষবং ঢ়বৎ যড়ঁৎ ধহফ সধহবং ধ ভঁষষ ৎড়ঃধঃরড়হ ধৎড়ঁহফ ঃযব বধৎঃয ড়হপব বাবৎু ৯০ সরহঁঃবং ৫০ বধপয ফধু ঃযব ংঢ়ধপব ঃড়ঁৎরংঃ ধনষব ঃড় ংবব ১৬ ংঁহংবঃং ধহফ ৬ ংঁহৎরংবং. এক সপ্তাহের মহাকাশ ভ্রমণ ট্যুর বিক্রি হয় ২০ মিলিয়ন ইউএস ডলারে। মহাকাশ ভ্রমণে সর্বপ্রথম পর্যটক ডেনিস টিটো নামক এক আমেরিকান ব্যবসায়ী। তিনি রাশিয়ান রকেটে (ঝড়ুঁম) করে ৩০শে এপ্রিল ২০০১ সালে আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে পৌঁছেন। ২য় পর্যটক ছিলেন একজন দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যবসায়ী গধৎশ ঝযঁঃঃষবড়িৎঃয উনি ২৫শে এপ্রিল ২০০২ সালে যাত্রা করেন। এবং তৃতীয় হিসেবে অৎবম ড়ষংবহ নামক আরেক আমেরিকান ব্যবসায়ী যাত্রা করেন ১লা অক্টোবর ২০০৫ সালে। ১৮ই সেপ্টেম্বর ২০০৬ সালে অহড়ঁংযবয অহংধৎর একজন ঞবষবপড়সসঁহরপধঃরড়হং ব্যবসায়ী প্রথম মহিলা হিসেবে মহাকাশ ভ্রমণ করেন। উনি আমেরিকা প্রবাসী ইরানী মহিলা। পরবর্তীতে পযধৎষবং ঝরসড়হুর নামে একজন ংড়ভঃধিৎব ধৎপযরঃবপঃ ৫ম ব্যক্তি হিসাবে মহাকাশ ভ্রমণে যান ৭ এপ্রিল ২০০৭ সালে। হিলটন হোটেল ঘোষণা দিয়েছে আগামী ১৫/২০ বছরের মধ্যে মহাকাশে ংঢ়ধপব যড়ঃবষ বানানো সম্ভব। বাংলাদেশের যুবকদেরকে ভ্রমণে উৎসাহিত করতে এবং ভ্রমণের মাধ্যমে সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ পর্যটন বিষয়ক সংগঠন করেন আহমদ শহীদুল হক (চান) ১৯৮৬ সালে। সংগঠনটির নাম ণড়ঁহম ঞড়ঁৎরংঃ ঈষঁন – ইধহমষধফবংয (ণঞঈ)। সংগঠনটির ‘চক্ষু মেলিয়া’ নামক পর্যটন বিষয়ক মাসিক ভ্রমণ বিষয়ক পত্রিকা ছিল। পরবর্তীতে ণঞঈ বাংলাদেশের উপর ভ্রমণ বিষয়ক গাইড বই বের করেন। সংগঠনটির চেয়ারম্যান ছিলেন ড. সৈয়দ রাশিদুল হাসান। যিনি ঞৎধাবষ ্ ঞড়ঁৎরংস বিষয়ে গ্রীস থেকে চয.উ ডিগ্রী অর্জন করেন প্রথম বাংলাদেশী হিসাবে। ছাত্র ও যুবকদের জন্য ণঞঈ আন্তর্জাতিক ইয়ুথ হোস্টেল কার্ড, ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট আইডেনটিটি কার্ড (ওঝওঈ), ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ ট্রাভেল কার্ড (ওণওঈ) ইত্যাদির সাথে পরিচিত করান এবং বাংলাদেশ থেকে সেই সমস্ত কার্ড পাবার ব্যব¯’া করেন। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই ছাত্র ও যুবকদের জন্য বিমান, রেল ও বাসে হ্রাসকৃত হারে ভ্রমণের সুযোগ রয়েছে। অথচ গত ৩৬ বছরেও আমাদের ছাত্র ও যুবকদের জন্য এই ধরনের কোনো সুযোগ করে দিতে পারিনি। সম্প্রতি ঘড়ৎঃয অষঢ়রহব ঈষঁন এর উদ্যোগে মুসা ইব্রাহিম ‘অভিযাত্রী’ নামক একটি পর্যটন ও অ্যাডভেঞ্চার বিষয়ক একটি মাসিক বুলেটিন বের করেন। বর্তমানে ঢাকায় প্রায় ৩০ টির মতো (আমার জানামতে) পর্যটন, অ্যাডভেঞ্চার, ব্যাকপ্যাকারস ক্লাব মিলে একটি ফেডারেশন গঠন করা হয়েছে এবং শুধুমাত্র মেয়েদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে ডড়সবহ ইধপশঢ়ধপশবৎং ঈষঁন (ডইঈ)। পর্যটন উন্নয়নে সরকারি উদাসীনতা অবহেলার কথা সকলেরই জানা। তবে কি আমরা চুপচাপ হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকব? ২০০৯ সালে পর্যটন সরকারি অনুদান (বাজেট) যেন থাকে সে ব্যাপারে সকলেরই এখন থেকে সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকার প্রয়োজন। ঞড়ঁৎরংস ওহফঁংঃৎু সারা বিশ্বের নাম্বার ওয়ান ইন্ডাস্ট্রি। হোটেল, মোটেল, গেস্ট হাউজ, রিসোর্ট, এয়ারলাইনস, বাস, রেস্টুরেন্ট, ট্রাভেল এজেন্ট, ট্যুর অপারেটর, রেন্ট-এ-কার ইত্যাদি নানা পেশার মানুষ জড়িত। এত মানুষের মধ্যে শুধুমাত্র সমন্বয়ের অভাবেই এই শিল্প আজ অবহেলিত। আসুন একত্রিত হই।
ভূ-পর্যটক আশরাফুজ্জামান উজ্জ্বল
‘পৃথিবীর পথে’ বইটিতে তাঁর এই ঘুরে বেড়ানোর নানান রকম অভিজ্ঞতা ঝুলি উজাড় করে দেওয়া। পর্যটকদের বা ট্যুর ‘ঃবহধৎু’-র বাইরে তারা যেতে যায় না। নিশ্চিন্ত নিরপেক্ষতা খোঁজে। আর তাই পৃথিবীতে পর্যটক, পরিব্রাজকের সংখ্যা কমে যা”েছ। পর্যটনে সরকারি রাজস্ব যত বাড়বে বিমল মুখার্জি, কলে াল গুহ, রামনাথ বিশ্বাসের মতো পর্যটক ততো অদৃশ্য হবেন। বাড়বে সৌখিন ট্যুরিস্ট। তাদের কেউ সৈয়দ মুজতবী আলী হতে পারবেন না। দর্শনার্থী (ঞড়ঁৎরংঃ) ; পর্যটক (ঞৎধাবষবৎ), পরিব্রাজক (এষড়নবঃৎড়ঃঃবৎ) তিনটি তিন রূপ। আজকাল প্যাকেজ ট্যুরের মাধ্যমে যারা ঘুরে বেড়ান তারা হ”েছন ঞড়ঁৎরংঃ এবং ভ্রমণসূচিতে ভাঙচুর ঘটিয়ে ভ্রমণকারী হয়ে ওঠে পর্যটক (ঞৎধাবষবৎ) আবার পর্যটককে ছাড়িয়ে অন্য উ”চতায় পৌঁছে যান পরিব্রাজক (এষড়নবঃৎড়ঃঃবৎ)। পরিব্রাজক আলাদা গোত্রের মানুষ। নির্দিষ্ট ঠিকানায় তার জš§ হলেও জীবনের এক বিশেষ পর্ব থেকে তিনি স্বে”ছায় ঠিকানা বদল করেন। তারপর সারাজীবন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ঘুরে বেড়ান। ¯’ায়ী ঠিকানাকে পুরানো পোশাকের মতো ছেড়ে রেখে বিভিন্ন ঠিকানায় তিনি বসবাস করেন।
মন্তব্য করুন