পূণ্যভুমি সিলেটে কয়েকদিন
আফসানা কিশোয়ার
এ কথা খুবই প্রচলিত আমরা যারা তথাকথিত শহুরে তাদের মাঝে যে নাগরিক জীবন আমাদের প্রায়শঃই ক্লান্ত করে তোলে। তা থেকে সাময়িক মুক্তির জন্যে আমরা ছুটিছাটা পেলেই পরিকল্পনা করি শহর থেকে দূরে কোথাও যাবার। যদিও আমি ব্যক্তিগতভাবে খুব একটা বুঝি না এসব ভ্রমণ আদতেই আমাদের ক্লান্তিহীন করে তোলে কি না। কারণ তিনদিন বা চারদিনের ভ্রমণে দেখা যায় আমাদের অনেক জায়গা দেখার ইচ্ছা থাকে। যেখানে ছুটির দিনে আমরা নয়টা দশটার আগে ঘুম থেকে উঠি না সেখানে বেড়াতে গেলে দেখা যায় ভোর সাতটা থেকে ছোটাছুটি শুরু হয়ে গিয়েছে। আমার এসব যুক্তি শুনে বন্ধুরা বলে উঠে ‘ থাক্ তোর যাওয়ার দরকার নেই’ । আমি তো যাব বন্ধুদের সাথে কয়েকটা দিন থাকার লোভে। হাসিমুখে ওদের বাক্যবাণ মেনে নিয়ে ঠিকই অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বের হয়ে মালিবাগ সোহাগ বাস কাউন্টারে পৌঁছে যাই বিকেল চারটার আগেই। আমার পরে বরং অন্য বন্ধুরা আসে।
আমাদের পাঁচজনের গ্রুপটা সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে তা আমরা মানুষের তাকানো দেখেই বুঝতে পারি। আমরা সেই বাস কাউন্টারে বসে সমানে খেয়ে যাচ্ছি। একে তো বৃহস্পতিবার, সবার ফুল অফিস কোনমতে পড়িমড়ি করে এসেছি আমরা, তার উপর আমাদের সাথে কোন ছেলে নেই পাঁচজনই বঙ্গনারী। চারটার বাস ছাড়বে পৌনে পাঁচটায়। বসে বসে খাওয়া ছাড়া আর কি করার আছে!
ঢাকা থেকে বের হওয়া
প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের বদৌলতে সিলেট যাবার রাস্তা বেশ ভালো। এর আগে যখন গিয়েছি তখনই আমি দেখেছি। আমার হিসেবে বড়জোর সাড়ে পাঁচঘণ্টা লাগবে আমাদের খাদিমনগর জাস্টেট রিসোর্ট পর্যন্ত পেঁৗছতে। তিনদিনের ছুটিকে সামনে রেখে মানুষ দলে দলে ঢাকা ত্যাগ করছে। কাঁচপুর পেরোতেই আমাদের সাতটা বেজে গেল। এর মধ্যে মাবরুকা সিঙ্গেল সিটে বসেছে। ঐটা কি যেন বিজনেস ক্লাস না কি সিট যেন। ওকে বিস্কুট আর পানির পাশাপাশি জুসও দেয়া হয়েছে। সেটা নিয়ে কাকলী, তুলি, শাবানা আপু কৃত্রিম ভঙ্গীমায় ক্ষুব্ধ। অথচ খাবারের ব্যাগে মাত্র সাড়ে তিন লিটার ম্যাংগো জুস তাও ন্যাকটারের। মাবরুকা বাসে দেয়া জুস পেয়েই খেয়ে ফেলেছে ছোঁচার মতো, সেটা নিয়ে ওকে বেশ খ্যাপানো হলো। ত্রিশোধর্্ব আমরা সবাই আমাদের বয়স ভুলে তুচ্ছ সব বিষয় নিয়ে আনন্দে মেতে উঠছি টু্যরের আমেজ পেতে।
ভৈরব পর্যন্ত যেতেই সাড়ে আটটা। বাস অল্প কিছুক্ষণের জন্যে উজানভাটি রেস্টুরেন্টে থামলো। আমরা হালকা কিছু খেয়ে আবার বাসে উঠলাম। এদিকে রাত হয়ে যাচ্ছে। আমরা একটু চিন্তিত। মাঝিরঘাটে আমাদের জন্যে মাইক্রো ঠিকঠাকমতো থাকবে কি না তা কনফার্ম করতে আমাদের শাবানা আপু মোটামুটি বীরাঙ্গনা বিক্রমে মোবাইলের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। ঐদিকে তুলি মোবাইলের উপর হামলে পড়লো আমরা জাস্টেটে পৌঁছে রাতের খাবার পাব কি না সেটা ঠিক রাখতে।
জাস্টেটে গিয়ে আশাভঙ্গ
মন্তব্য করুন