দিনাজপুরের প্রত্ন-সম্পদ
ড. মাসুদুল হক
উত্তরবঙ্গের বরেন্দ্রভূমি ভৌগলিক দিক দিয়ে যেমন প্রাচীন, ইতিহাসের দিক দিয়েও তেমনি প্রাচীন। বরেন্দ্রভূমির উত্তরাঞ্চল নিয়ে গঠিত দিনাজপুর আর দক্ষিণাঞ্চল নিয়ে মালদহ ও রাজশাহী। বরেন্দ্রভূমির মৃত্তিকা অতি প্রাচীন শিলা দিয়ে গঠিত। গাঙ্গেয় বদ্বীপ অঞ্চলের মতো বরেন্দ্রভূমি সমতল নয়। দিনাজপুরে বরেন্দ্রভূমির উচ্চতা অপেক্ষাকৃত অধিক তবে কোনো স্থানই সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে একশত ফিটের বেশি উঁচু নয়। দিনাজপুর শহর থেকে কান্তনগর পর্যন্ত ভূ-খণ্ডটি জেলার সর্বোচ্চ স্থান। ক্ষুদ্র ও বৃহৎ নদী প্রবাহের জন্য এই জেলার সর্বত্র নিম্ন সমতল ভূমির সৃষ্টি হয়েছে। উত্তর বরেন্দ্রভূুমি বিশেষ করে দিনাজপুরের বিল ও জলাভূমির আকৃতি ছোট এবং পরিমাণে কম। দক্ষিণের বরেন্দ্র অঞ্চল অপেক্ষাকৃত কম উঁচু এবং সমতল ভূমির দ্বারা পরিবেষ্টিত। পূর্বে যমুনা অববাহিকা এবং পশ্চিম-দক্ষিণে গাঙ্গেয় অববাহিকার দ্বারা পরিবেষ্টিত। এছাড়াও দিনাজপুরের দক্ষিণ অঞ্চলের বরেন্দ্র ভূমিতে প্রচুর সংখ্যক বৃহদাকারের বিল ও জলাভূমি দেখা যায়।
দিনাজপুরের প্রায় সবটুকু ভূ-খণ্ড আইন-ই-আকবরি-তে উল্লেখিত সরকার তাজপুর, সরকার পিঞ্জরা এবং সরকার ঘোড়াঘাটের অন্তভর্ুক্ত ছিল। এই ৩টি সরকারের অন্তর্ভুক্ত মহলসমূহের মধ্যে দিনাজপুরের নাম দেখা যায় না। উল্লেখ্য যে তাজপুর, পিঞ্জরা এবং ঘোড়াঘাটের সদর দপ্তরসমূহ বৃহত্তর দিনাজপুরেই অবস্থিত। সরকার পিঞ্জরার অধিকাংশ অঞ্চল দিনাজপুর জেলার ভূ-খণ্ড নিয়ে গঠিত এবং সরকার পিঞ্জরার সদর দপ্তর দিনাজপুর শহরের নিকটেই অবস্থিত ছিল।১ সম্রাট শাহজাহানের রাজত্বকালের শেষভাগে উত্তরাধিকার সংগ্রামের সময় কামতা (কুচবিহার) ও কামরূপ (আসাম) রাজদ্বয় কর্তৃক উত্তরবঙ্গের উত্তরাঞ্চল আক্রান্ত ও অধিকৃত হয়। এর ফলে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে একটি রাজনৈতিক পরিবর্তন দেখা দেয়। উত্তরাধিকার সংগ্রাম শেষে বাংলার নব-নিযুক্ত সুবাদার মীর জুমলা দ্রুত আক্রমণ চর্ািলয়ে হারানো রাজ্য পুনরুদ্ধার করেন। পুনরুদ্ধারকৃত ভূ-খণ্ডের নামকরণ করা হয় বাদশাহ আওরঙ্গজেবের নামে আওরঙ্গাবাদ। নামের পরিবর্তন হলেও সরকারি কাগজপত্রে সরকার তাজপুর ও সরকার পিঞ্জরার ব্যবহার থেকেই যায়।
মুর্শিদকুলী খান সুবা বাঙালাকে যে ১৩টি চাকলায় বিভক্ত করেন তার মধ্যে দিনাজপুরের নাম নেই। তবে বর্তমান দিনাজপুরের অধিকাংশ অঞ্চলুচাকলা আকবর নগর এবং চাকলা ঘোড়াঘাটের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এ থেকে ধারণা করা যায় যে, আঞ্চলিক নাম হিসেবে আওরঙ্গাবাদের প্রচলন বিলুপ্ত হয়ে যায় এবং তদস্থলে উপরোক্ত নামের চাকলা স্থানগ্রহণ করে। একটি বৃহৎ রাজস্ব অঞ্চল হিসেবে আকবর নগরের উল্লেখ উইলিয়াম হান্টারের বিবরণে দেখা যায়।২ ১৭২৮ সালে নবাব সুজাউদ্দিন খান রাজস্ব সংস্কার করলেও চাকলাসমূহের নামের কিংবা সীমানার বিশেষ কোনো পরিবর্তন করেছিলেন বলে মনে হয় না। ১৭৬৫ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক দেওয়ানী লাভের সময় সুবা বাঙালা অন্ততপক্ষে ২৮টি জেলায় বিভক্ত ছিল। সুবা বাঙালার এই জেলাওয়ারী বিভাগ মীর কাশিম কর্তৃক প্রবর্তিত হয়। এরমধ্যে দিনাজপুরের নাম পাওয়া যায়। সুতরাং ১৭২২ থেকে ১৭৬০ সালের মধ্যবর্তী কোনো এক সময় ‘দিনাজপুর’ নাম প্রচলন হয়।
নবাব মুর্শিদকুলী খান কর্তৃক সুবা বাঙালায় জমিদারি ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়। দিনাজপুরের জমিদার সেই সময় থেকেই জমিদারি সনদ প্রাপ্ত হন। দিনাজপুরের জমিদার (যিনি রাজা নামে অভিহিত হতেন) যে অঞ্চলের জমিদারি প্রাপ্ত হন সেই অঞ্চল ‘দিনাজপুর’ নামে পরিচিতি লাভ করে, অন্য কোনো নামে নয়। সুতরাং আঠারো শতকের দ্বিতীয় দশকে দিনাজপুর নামের প্রচলন হয়েছিল এরূপ অনুমান করা যায়।
দেওয়ানী শাসনামলের প্রারম্ভে দিনাজপুর জেলার আয়তন খুব বড় ছিল না। মীর কাশিমের শাসনামলে জমিদারদের অত্যন্ত চাপের মুখে থাকতে হতো। নবাবী আমল শেষে দেওয়ানী শাসনামলে দিনাজপুরের রাজা তার জমিদারির আয়তন বৃদ্ধি করতে সচেষ্ট হন। এরফলে পাশর্্ববর্তী কিছু কিছু বিচ্ছিন্ন অঞ্চল দিনাজপুর জমিদারির অন্তর্ভুক্ত হয়। জেমস রেনেলের মানচিত্র আলোচনা করলেই এটা বোঝা যায়। রেনেলের বিবরণ অনুসারে ১৭৮৪ সালে দিনাজপুরের আয়তন ছিল ৩৫১৯ বর্গমাইল। ওয়াল্টার হ্যামিলটনের বিবরণ অনুসারে রেনেলের বিবরণের পর থেকে বুকানন হ্যামিলটনের বিবরণ লেখা পর্যন্ত সময় দিনাজপুরের আয়তন ক্রমশঃই বৃদ্ধি পেয়েছিল। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রণয়নের সময় দিনাজপুরের আয়তন আরো বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। প্রায় সমগ্র ইদ্রকপুর জেলা, শিলবাড়ী জেলার কিয়দংশ, বর্তমান মালদহ জেলার অধিকাংশ দিনাজপুরের অন্তভর্ুক্ত হয়। দিনাজপুরের এই ভৌগোলিক অবস্থানের কালে বুকানন হ্যামিলটন দিনাজপুর জরিপ করেন। বুকানন হ্যমিলটনের বিবরণ অনুসারে দিনাজপুরের আয়তন ছিল ৫৩৭৪ বর্গমাইল এবং দিনাজপুর উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ জেলা ছিল। বুকানন হ্যামিলটনের মতে: রাজা দনুজ (রাজা গণেশের রাজকীয় উপাধি ছিল রাজদনুজমর্দন দেব) এর অধিকারভূক্ত অঞ্চল দিনাজপুর নামে পরিচিতি লাভ করে।৩
এ-কথা সুবিদিত যে, বাংলাদেশের বর্তমান প্রশাসনিক পরিবর্তনের কারণে ব্রিটিশ আমলের জেলাগুলি বেশ ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র জেলায় পরিণত হয়েছে। অবশ্য এর ফলে বাংলার আবহমানকালের অর্থনীতি, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ধারাবাহিকতায় তেমন মারাত্মক কোনো বিঘ্ন ঘটেছে বলে মনে হয় না। ব্রিটিশ আমলের যে জেলাটি দিনাজপুর নামে পরিচিত ছিল, তা ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় পশ্চিম দিনাজপুর ও দিনাজপুর নামে পৃথক হয়ে পড়ে। পরবতর্ীকাল এ দু’টি জেলারও নানা প্রশাসনিক পরিবর্তন ঘটে, যার ফলে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও পূর্ব পাকিস্তানের দিনাজপুর আরো ক্ষুদ্র প্রশাসনিক অঞ্চলে পরিণত হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলাটি ৩টি স্বতন্ত্র জেলায় বিভক্তুদিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও এবং পঞ্চগড়। এগুলোকে সমষ্টিগতভাবে বৃহত্তর দিনাজপুর নামে আখ্যায়িত করা হয়।৪ আমাদের আলোচনা শুধুমাত্র বর্তমান দিনাজপুরে সীমাবদ্ধ থাকবে।
উপমহাদেশের বহু স্থানের মতো দিনাজপুর অঞ্চলেও অতি প্রাচীনকালে মানববসতি গড়ে উঠে। এরপর ধীরে ধীরে সভ্যতা-সংস্কৃতি এবং রাজনৈতিক বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে এটি উত্তর ভারতীয় বৃহত্তর জনপদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে সমপৃক্ত হয়ে পড়ে, ফলে এখানে আবির্ভাব ঘটে ভারতীয় সংস্কৃতির। এ অঞ্চলটি মৌর্য শাসন, গুপ্ত শাসন এবং পরবর্তী সর্বভারতীয় সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। মহাস্থান ব্রাহ্মীলিপির প্রাপ্তি থেকে অনুমান করা হয়, দিনাজপুর মৌর্য শাসনের সুফল ভোগ করেছে। আবার গুপ্ত নামধারী রাজাদের বেশ কিছু তাম্রশাসন প্রমাণ করেছে দিনাজপুরে গুপ্তদের বিসতৃতির কথা। এভাবে দিনাজপুরে প্রশাসনিক কাঠামো, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, নগরায়ন, যাতায়াত ব্যবস্থা বলতে গেলে সবকিছুরই বিকাশ ঘটেছে বৃহত্তর রাজশক্তির বা সর্বভারতীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তির ছত্রছায়ায়। দিনাজপুরে প্রাচীনকাল থেকেই আবির্ভাব ঘটে হিন্দু, বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্মের। এরই ভিত্তিতে বিকশিত হতে থাকে স্থানীয় সমাজে নতুন দর্শন ও নতুন চিন্তা-ভাবনা। এ জনপদের অধিবাসীরা নতুন মত ও নতুন পথের সন্ধান পেয়েছে, সেগুলো গ্রহণ ও বর্জন করেছে এবং নানাভাবে সমৃদ্ধ হয়েছে। একই সাথে এ অঞ্চলে ঘটে উপ-মহাদেশের নানা ভাষা এবং নানা অঞ্চলের মানুষের অবির্ভাব। সংক্ষেপে বলতে হয় প্রাচীনকালে দিনাজপুর কোনো একটি বিচ্ছিন্ন জনপদ ছিল না; যদিও এ অঞ্চলে প্রবেশের ক্ষেত্রে ছিল নানাবিধ প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকতা। বরং বলা যায়, সর্বভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির বাহক হিসেবে দিনাজপুরের পরিচয় পাই নানাবিধ ঐতিহাসিক নিদর্শন থেকে। মধ্যযুগে মুসলমানদের আগমনের ধারা ধরেই ১৩ শতকের প্রথমদিকে এ ভূ-খণ্ডে আগমন ঘটে মুসলমান অভিযানকারীদের। এরই পরিপ্রেক্ষিতে যেমন বদলে যায় এখানকার রাজনৈতিক জীবন তেমনি ইসলাম ধর্মকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে নতুন সমাজ ও সংস্কৃতি। এভাবেই মধ্যযুগে দিনাজপুর হয়ে উঠে হিন্দু, বৌদ্ধ ও ইসলাম এই ৩টি প্রধান সাংস্কৃতিক স্রোতধারার মিলন ক্ষেত্র। এই নানাবিধ জীবনবোধ সত্ত্বেও দিনাজপুর অঞ্চলের জনগণ তাদের পারস্পরিক ভালোবাসার বন্ধন এবং দেশপ্রেম দিয়ে অঞ্চলটির অগ্রযাত্রা অক্ষুণ্ন রেখেছে।৫
ইতিহাসের ধারায় শাসকবর্গের ব্যক্তিগত উদ্যোগ, আচরণ এবং শাসন ব্যবস্থা এ অঞ্চল এবং এর অধিবাসীদের নানাভাবে প্রভাবিত করেছিল, যার ফল ছিল ইতিবাচক। যেমন বিভিন্ন প্রশাসনিক কাঠামো, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যাতায়াত ও জনকল্যাণমূলক কাজের মাধ্যমে এ অঞ্চলে শান্তি ও নিরাপত্তার প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। এর ফলে প্রাচীনকাল থেকে এখানকার অধিবাসীরা জীবন-যাপনের জন্য বিচ্ছিন্নভাবে হলেও পেয়েছেন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ এবং উৎপাদনমুখী কর্মকাণ্ডেও সম্পৃক্ত করতে পেরেছেন নিজেদের । এর পাশাপাশি অনিবার্যভাবেই নানা ধরনের নেতিবাচক শক্তির প্রভাব-প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। যে কারণে এক গোষ্ঠী বা শ্রেণী কতর্ৃক অপর গোষ্ঠী বা শ্রেণীর উপর আধিপত্য বিস্তার এবং শোষণ ও নির্যাতনের দৃষ্টান্ত রয়েছে।
আধুনিককালের রাজনৈতিক পালাবদলে এই জনপদের শাসন ক্ষমতা চলে যায় অপর এক দল বিদেশীদের হাতে, যাদের আগমন সুদূর ইউরোপ থেকে। এ অঞ্চলের অধিবাসীদের জন্য এটিও এক নতুন অভিজ্ঞতা। তবে এ অভিজ্ঞতা ও ইংরেজ ঔপনিবেশিককাল ছিল এক মিশ্রিত সময়। এ সময় এক দিকে যেমন ধন-সম্পদ পাচারের ফলে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড দূর্বল হয়ে পড়ে, তেমনি ইউরোপ থেকে আগত নতুন ভাষা, নতুন শিক্ষারীতি, নতুন চিন্তা-ভাবনা, দর্শন ও সংস্কৃতি এ অঞ্চলের মধ্যযুগের সীমাবদ্ধতাকে ঠেলে দূরে সরিয়ে দেয়। জনপদের সকল মানুষের মধ্যে এক নতুন চেতনার জন্ম হয়ুযাকে সাধারণভাবে আমরা বলে থাকি এ অঞ্চলের পুনঃজাগরণ এবং গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার পথযাত্রা। এই পাশ্চাত্য সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ হয়ে দিনাজপুর আজ একবিংশ শতাব্দীর দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত।
এই জনপদের সুদীর্ঘকালের ইতিহাসে দিনাজপুরের অধিবাসীরা তাদের সৃজনশীলতার ছাপ রেখেছেন শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, সংগীত, ধর্ম, স্থাপত্য, প্রত্ম-সম্পদে। আর এ ক্ষেত্রে সর্বভারতীয় জনগণের অভিজ্ঞতার সাথে দিনাজপুরবাসীদের রয়েছে অপূর্ব সাযুজ্য।৬
২.
বৃহত্তর দিনাজপুর এলাকায় মানুষের বসতি কখন শুরু হয়েছিল স্পষ্ট করে বলা কঠিন। বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গ এবং ভারতের বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তরাঞ্চল গঙ্গা উপত্যাকার উত্তরাংশ হিসেবে বিবেচ্য। এই বিস্তৃত অঞ্চলে প্রস্তর যুগ থেকে শুরু করে মধ্যবর্তী প্রস্তর যুগ পর্যন্ত কোনো প্রত্ন নিদর্শন আবিষ্কৃত হয় নি বলে গবেষকরা মনে করেন। তারা মনে করেন মানববসতির জন্য অনুকূল পুুরিবেশ, শিকার ও বসবাসের নিমিত্তে বিস্তৃত উঁচু ভূমি এবং হাতিয়ার তৈরির জন্য পর্যাপ্ত পাথর না থাকায় এই অঞ্চলে সম্ভবত তখন মানব বসতি গড়ে ওঠে নি। নব্য প্রস্তর যুগটি ভূ-তাত্তি্বক কালানুক্রমে হলোসিন পর্যায়ে পড়ত। হলোসিন যুগে প্রকৃতিতে বসবাস উপযোগী সহজতর পরিবেশ, প্রাচীন বড় প্রাণীর পরিবর্তে ছোট ছোট প্রাণীর আগমন এবং প্রায় সুনির্দিষ্ট নিয়মে বাৎসরিক ঋতুগুলোর আবর্তন লক্ষণীয়। প্রকৃতির এই আনুকূল্য একদিকে যেমন বিস্তৃত ও দূর অঞ্চলে মানুষকে পদচিহ্ন রাখার সুযোগ করে দেয়, অপরদিকে কৃষি ও পশুপালনের মতো নিশ্চিত পেশায় মানুষকে আকৃষ্ট করে। আর তাই গঙ্গা উত্তরাংশে বিহার থেকে উত্তরবঙ্গের দিনাজপুর পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলে প্রথমবারের মতো নব্য প্রস্তর যুগের মানুষের আগমন ঘটে।৭
নব্য প্রস্তর যুগে এ অঞ্চলে মানুষের জীবন ধারা কেমন ছিল বলা কঠিন। এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত ৭টি প্রত্নস্থলের মধ্যে একটি পুনর্ভবা নদীর তীরে অবস্থিত এবং বাকী ৬টি তিস্তা নদীর তীরে অবস্থিত। সুতরাং মনে করা যেতে পারে যে, এ সময়ে মানুষেরা নদীর তীরবর্তী উঁচু সমতল ভুমিতে বসবাস করত। ভারতে নব্য প্রস্তর সংস্কৃতির পরবর্তীতে তাম্র প্রস্তর সংস্কৃতির আবির্ভাব ঘটেছিল। কিন্তু বৃহত্তর দিনাজপুর বা উত্তরবঙ্গ ও তার পাশর্্ববর্তী অঞ্চলে এখনও পর্যন্ত তা লক্ষ করা যায় নি। তবে উত্তরবঙ্গের উচু সমতলভূমি, অসংখ্য নদী-নালা, বিল এবং বন্য পশু-পাখির উপস্থিতি দেখে প্রাচীনকালে তাম্র প্রস্তর যুগ বিকাশের ক্ষেত্রে একটি উপযোগী পরিবেশ ছিল বলে গবেষকরা অনুমান করেন; যা একটি সঠিক জরিপের অপেক্ষায় এখনও মাটির গভীরে প্রথিত আছে বলেই ধরে নিতে হচ্ছে।৮
খ্রিস্টপূর্ব তিন শতকের দিকে উত্তরবঙ্গের মানববসতির প্রাথমিক ধারার প্রত্যক্ষ লিখিত প্রমাণ পাওযা যায় মহাস্থান শিলালিপি থেকে যা আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি। এই শিলালিপিটি মৌর্য শাসক অশোক কর্তৃক জারিকৃত একটি রাজকীয় আদেশ বলে অনুমান করেন প্রত্নতাত্তি্বক গবেষকগণ। এ শিলালিপিতে দুর্ভিক্ষজনিত কারণে এ অঞ্চলের প্রজাদের খাদ্য-শস্য ও অর্থ দিয়ে সাহায্যের কথা বলা হয়েছে এবং পরবতর্ীতে সুসময়ে এগুলো আবার পুনরুদ্ধার করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ লিপির আলোকে গবেষকগণ ধারণা করেন যে, উত্তরবঙ্গ তখন পুণ্ড্রনগর নামে পরিচিত ছিল এবং এটি মৌর্য শাসনামলে একটি প্রশাসনিক একক ছিল। সুতরাং প্রশাসনিক একক হিসেবে অবশ্যই মৌর্য পূর্ব যুগ থেকে এ অঞ্চলে মানববসতি ছিল। এই বিষয়টি ঐতিহাসিক ও প্রত্নগবেষকগণ বিশ্বাস করেন। মৌর্য যুগ থেকে মুসলিমপূর্ব যুগ পর্যন্ত সময়ে সর্বমোট ১৪৭টি প্রত্নস্থল আবিষ্কৃত হয়েছে। এর মধ্যে ১টি পাবনা, ১২টি রংপুর, ১৭টি রাজশাহী, ৭টি পঞ্চগড়, ৭টি ঠাকুরগাঁও, ৩৪টি দিনাজপুর এবং ১০৯টি বগুড়া জেলায় অবস্থিত বলে চিহ্নিত করেছেন প্রত্নতত্ত্ববিদ আ.কা.ম যাকারিয়া। প্রাচীন বসতির জন্য বন্যা ছিল একটি প্রাকৃতিক সমস্যা। যে কারণে বন্যা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বসতিগুলোর বেশির ভাগই পাদদেশীয় সমভূমি এবং প্লাইস্টোসিন উঁচু ভূমিতে অবস্থিত। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই কৃষি-কার্যের সুবিধার্থে প্রত্নস্থলগুলো অল্প প্লাবিত অঞ্চল থেকে দূরে ছিল না। এখানে প্রাচীন বসতি স্থাপনকারী অধিবাসীরা শুধুমাত্র ধর্মীয় ও প্রশাসনিক-ভবনে ইটের ব্যবহার করেছিল এবং সাধারণ বসতির ঘরবাড়িগুলোতে স্থানীয়ভাবে প্রাপ্ত গাছপালা, নলখাগড়া, লতাপাতা ব্যবহার করেছিল বলে গবেষকরা মনে করেন।৯
দিনাজপুরের এই প্রত্নস্থলগুলো কোন কোন উপজেলায় আবিষ্কৃত হয়েছে এবং এগুলোর নির্মাণ বৈশিষ্ট কি? তাুআ.কা.ম যাকারিয়া অনুসরণে নিম্নে উল্লেখ করা হল১০:
ক্রমিক নং প্রত্নস্থলের নাম উপজেলা নির্মাণ বৈশিষ্ট্য
১. রাজাসন-সতিমনডাঙি সেতাবগঞ্জ মাটি ও ইটের সতূপের ধ্বংসাবশেষ
২. ভেলুয়ার মন্দির বীরগঞ্জ মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ
৩. কাঠগড় ও ঢাকেশ্বরী মন্দির বীরগঞ্জ মাটির দূর্গ
৪. ঝলঝালির সতূপ বীরগঞ্জ সতূপের ধ্বংসাবশেষ
৫. কান্তনগর দূর্গনগরী দিনাজপুর সদর মাটির দূর্গ
৬. শ্রী চন্দ্রপুর সতূপ দিনাজপুর সদর মাটির দূর্গ
৭. গোয়ালডিহি খানসামা সতূপের ধ্বংসাবশেষ
৮. হিরা-জিরা বেশ্যার ভিটা পার্বতীপুর সতূপের ধ্বংসাবশেষ
৯. কিচক রাজার গড় পার্বতীপুর মাটির দূর্গ
১০. বেলাই চণ্ডি পার্বতীপুর মাটির দূর্গ
১১. দেউলি পার্বতীপুর মাটির দূর্গ
১২. পাঁচ পুকুরিয়া বদরগঞ্জ সতূপের ধ্বংসাবশেষ
১৩. দূর্গনগরী ফুলবাড়ী মাটির দূর্গ
১৪. দামোদরপুর ফুলবাড়ী তাম্রশাসন প্রাপ্তি স্থান
১৫. বামনগড় ফুলবাড়ী মাটির দূর্গ
১৬. পুকুরি ফুলবাড়ী স্থাপত্যের ধ্বংসাবশেষ
১৭. ভাঙ্গা দিঘি ফুলবাড়ী স্থাপত্যের ধ্বংসাবশেষ
১৮. চরকাই বিরামপুর মাটির দূর্গ
১৯. মির্জাপুর বিরামপুর স্থাপত্যের ধ্বংসাবশেষ
২০. চণ্ডিপুর-গড়পিঙলাই বিরামপুর মাটির দূর্গ
২১. চরকাই চোর চক্রবর্তী বিরামপুর মাটির দূর্গ
২২. বিবির ধাপ বিরামপুর সতূপের ধ্বংসাবশেষ
২৩. সিতাকোট বিহার বিরামপুর সতূপের ধ্বংসাবশেষ
২৪. নবাবগঞ্জ তর্পনঘাট নবাবগঞ্জ সতূপের ধ্বংসাবশেষ
২৫. হরিনাথপুর ভাদুরিয়া নবাবগঞ্জ মাটির দূর্গ
২৬. চকজুনিদ-দরিয়া নবাবগঞ্জ সতূপের ধ্বংসাবশেষ
২৭. দামোদরপুর নবাবগঞ্জ সতূপের ধ্বংসাবশেষ
২৮. জিকাগড় নবাবগঞ্জ মাটির দূর্গ
২৯. বেলোয়া ঘোড়াঘাট মাটির দূর্গ
৩০. পল্লী বা পাল্লরাজ ঘোড়াঘাট সতূপের ধ্বংসাবশেষ
৩১. বার পাইকের গড় ঘোড়াঘাট মাটির দূর্গ
৩২. বইগ্রাম হাকিমপুর তাম্র শাসন প্রাপ্তিস্থল
৩৩. টংগীশহর হাকিমপুর সতূপের ধ্বংসাবশেষ
বৃহত্তর দিনাজপুরে প্রাপ্ত অসংখ্য মাটির দূর্গনগরী ও প্রাচীন স্থাপত্যসমূহ একদিকে যেমন এখানে মানববসতির প্রাথমিক ধারার সাক্ষ্যবহন করছে, অন্যদিকে তেমনি এ অঞ্চলের অতীত ঐতিহ্য ও সমৃদ্ধিকেও প্রকাশ করেছে।
উপরের সারণি থেকে আমরা উপলব্ধি করতে পারছি যে, প্রাচীন বৌদ্ধ-হিন্দু যুগে দিনাজপুরের বিভিন্ন স্থানে বহু বৌদ্ধবিহার ও মন্দির নির্মাণ হয়েছিল। কিন্তু কালের বিবর্তনে বেশির ভাগ কীর্তিই সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। তবে কিছু কিছু প্রাচীন কীর্তির ধ্বসাবশেষ মাটির নিচে চাপা পড়ে এখন ঢিবিতে পরিণত হয়েছে। আমরা এ-প্রবন্ধে দিনাজপুর জেলার বৌদ্ধ, হিন্দু ও মুসলমান আমলের প্রত্ন-সম্পদগুলো সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা স্পষ্ট করার চেষ্টা করব। এ পর্যন্ত দিনাজপুর জেলায় প্রাপ্ত সর্বপ্রাচীন প্রত্নতাত্তি্বক নিদর্শন হচ্ছে সম্রাট কুমার গুপ্তের বৈগ্রাম শিলালিপি। অবশ্য অবিভক্ত দিনাজপুর জেলার বানগড়ে যে সমস্ত নিদর্শন পাওয়া গেছে, তা থেকে প্রমাণিত হয় যে গুপ্ত ও মৌর্য যুগের অনেক আগে থেকেই এ অঞ্চলে জনপদ গড়ে উঠেছিল।
সেতাবগঞ্জ উপজেলার সদর থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার উত্তরে বীরগঞ্জ-পীরগঞ্জ রাস্তার ধারে হাটের কাছে রাস্তার পশ্চিম পাশে আবিষ্কৃত হয়েছে একটা বড় আকারের ঢিবি। স্থানীয় লোক এই ঢিবিকে সতিমন ডাঙি নামে চিহ্নিত করে থাকেন। বর্তমানে এই ঢিবির উচ্চতা ২ থেকে ৩ মিটারের বেশি নয়। ধারণা করা হয়, এই স্থানে একটি বৌদ্ধবিহার ছিল। এখানে সিংহের উপর উপবিষ্ট কাল পাথরে তৈরি বৌদ্ধমূর্তি ছিল বলে স্থানীয় জনগণ জানান। এ থেকে বৌদ্ধবিহারের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়।
বীরগঞ্জ-পীরগঞ্জ সড়কে পুনর্ভবা নদীর উপর যে পাকা ব্রিজ আছে সেটি পার হয়ে ৫কি.মি দক্ষিণে কাহারোল উপজেলার অন্তর্গত ভেলুয়া গ্রাম। এই গ্রামের সবচেয়ে প্রাচীন দীঘির নাম ভেলুয়া দীঘি। ভেলুয়া অর্থাৎ বেহুলার সঙ্গে জন-প্রবাদে জড়িত এ দীঘির অনতিদূরে প্রাচীন কালের ইট পাথরে পরিপূর্ণ প্রায় ৫ মিটার উঁচু মাঝারি ধরনের একটি ঢিবি রয়েছে। এ ঢিবির উপর থেকে ১ মিটার উঁচু মাথার উপরে ছত্র এবং দু’পাশে ২৪টি ছোট ছোট মূর্তিসহ একটি নগ্ন জৈন মূর্তি পাওয়া গেছে। এ থেকে ধারণা করা হয় যে, এক সময় এটি জৈন মন্দির ছিল। মূর্তির গঠন কৌশল দেখে পণ্ডিতগণ অনুমান করেন যে, এ মূর্তিটি পাল যুগের। মূর্তিটি বর্তমানে ঢাকা যাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে।
তারপর দিনাজপুর জেলা সদর থেকে ২০ কি.মি. উত্তরে এবং কাহারোল উপজেলা সদর থেকে ৭ কি.মি দক্ষিণ-পূর্বে সুন্দরপুর ইউনিয়নে, দিনাজপুর-তেঁতুলিয়া মহাসড়কের পশ্চিমে ঢেপা নদীর তীরে টেরাকোটার অলংকরণের বৈচিত্র ইন্দো-পারস্য ভাস্কর কৌশলে ও শিল্প মহিমায় নির্মিত কান্তজীউ মন্দির অবস্থিত। শ্রীকৃষ্ণ বিগ্রহ অধিষ্ঠানের জন্য এ মন্দির নির্মিত। কান্তজীউ মন্দির যে স্থানে স্থাপিত তার নাম কান্ত-নগর। কান্তনগর সম্পর্কে বহু পৌরাণিক গল্প ও উপখ্যান প্রচলিত রয়েছে। কথিত আছে যে, মহাভারতে বর্ণিত বিরাট রাজার গো-শালা এখানে বিদ্যমান ছিল। প্রকৃতপক্ষে মন্দিরটি যেখানে তৈরি হয়েছে সেটি একটি প্রাচীন স্থান এবং প্রাচীন দেয়ালে ঘেরা দূর্গনগরেরই একটি অংশ। প্রত্নতাত্তি্বকগণ একে কান্তনগর দূর্গ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। প্রায় ১ মিটার উঁচু এবং প্রায় ১৮ মিটার বাহুবিশিষ্ট পাথর নির্মিত একটি বর্গাকার বেদীর উপর এই মন্দিরটির অবস্থান। শোনা যায় বেদীর পাথরগুলো আনা হয়েছিল অবিভক্ত দিনাজপুরের প্রাচীন বানগড় নগরের ভেঙ্গে যাওয়া প্রাচীন মন্দিরগুলো থেকে। পাথরের বেদীর উপর মন্দিরটি ইটের তৈরি। বর্গাকারে নির্মিত মন্দিরের প্রত্যেক বাহুর দৈর্ঘ্য ১৬ মিটার। মন্দিরের চারিদিকে আছে বারান্দা। প্রত্যেক বারান্দার সামনে আছে দুটি করে স্তম্ভ। স্তম্ভগুলো বিরাট আকারের এবং ইটের তৈরি। স্তম্ভ ও পাশের দেয়ালের সাহায্যে প্রত্যেক দিকে ৩টি করে খোলা দরজা তৈরি করা হয়েছে। বারান্দার পরই আছে মন্দিরের কামরাগুলো। একটি প্রধান কামরার চারিদিকে আছে বেশ কয়েকটি ছোট কামরা। তিনতল বিশিষ্ট এই মন্দিরে ৯টি চূড়ারত্ন ছিল। এজন্য এটাকে নবরত্ন মন্দির বলা হয়ে থাকে। ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দের ভুমিকম্পে মন্দিরের চূড়াগুলো ভেঙ্গে যায়। ইট দ্বারা তৈরি এই মন্দিরের গায়ে পোড়া মাটির চিত্র ফলকের সাহায্যে রামায়ণ ও মহাভারতের প্রায় সবকটি প্রধান কাহিনীই তুলে ধরা হয়েছে। সে সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণের বিভিন্ন কাহিনী এবং সম্রাট আকবরের কিছু কিছু রাজকর্মের চিত্রকর্ম রয়েছে। মন্দিরের উত্তর দিকের ভিত্তিবেদীর শিলালিপি থেকে জানা যায় দিনাজপুরের জমিদার মহারাজা প্রাণনাথ রায় (মৃতু্য১৭২২ খ্রি.) তার শেষ জীবনে মন্দির তৈরির কাজ শুরু করেন এবং মৃতু্যর পর তাঁর আদেশ অনুসারে দত্তক পুত্র মহারাজা রামনাথ রায় এই মন্দির তৈরির কাজ শেষ করেন ১৭৫২ খ্রিস্টাব্দে। কান্তজীউ বা শ্রীকৃষ্ণর বিগ্রহ ৯ মাস এ মন্দিরে অবস্থান করেন এবং রাসপূর্ণিমায় তীর্থ মেলা বসে। উল্লেখ্য যে, বাকী ৩ মাস বিগ্রহ দিনাজপুর রাজবাড়ীর মন্দিরে রাখা হয়।
গবেষক মেহ্রাব আলীর লেখা থেকে জানা যায়, এই আমলেই কান্তমন্দিরের উদ্বৃত্ত মালমসলাদি দিয়ে মন্দিরের দক্ষিণে (অর্ধ কিলো.) নির্মিত হয় একটি মসজিদ। যেটি নয়াবাদ মসজিদ নামে পরিচিত।১১
ফুলবাড়ী উপজেলা থেকে প্রায় ৮ কি.মি. দক্ষিণ পশ্চিমে রয়েছে চিন্তামন নামক একটি প্রাচীন স্থান। সেখান থেকে ৫ কি.মি. পশ্চিমে রয়েছে পুকুরি নামক ১টি প্রাচীন গ্রাম। অসংখ্য প্রাচীন দীঘি ছাড়াও প্রায় ৮ বর্গ কি.মি. জুড়ে এখানে প্রাচীন ইট পাথর ও হাড়িপাতিলের নিদর্শন পাওয়া যায়। মাটি খুঁড়লে যেখানে সেখানে ইট এবং প্রাচীন ইমারতের ভিত্তি বেড়িয়ে পড়ে। প্রায় দেড় কি.মি. দীর্ঘ একটি প্রাচীন পাকা সড়কের চিহ্ন এখনও স্পষ্টভাবে দেখা যায়। এই এলাকা থেকে কাল ব্রহ্মার মূর্তি, গণেশ মূর্তি, বিষ্ণু মূর্তি এবং গুপ্ত আমলের কিছু স্বর্ণ মুদ্রা পাওয়া গেছে। এছাড়াও ফুলবাড়ী উপজেলার অন্যান্য প্রত্ন নিদর্শনগুলো হচ্ছে দূর্গ নগরী, দামোদরপুর, বামনগড়, ভাঙ্গা দীঘিুযেগুলো আমরা পূর্বে সারণিতে উল্লেখ করেছি।
মন্তব্য করুন